শাহ জাহান আহমেদ, মাল্টা থেকে থমথমে রাত,- আমার পাশে বসল অতিথি, বললে,- আমি অতীত ক্ষুধা,-তোমার অতীত স্মৃতি!
( জীবনানন্দ দাশ)
১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ জুলাই সিলেট ভাগের গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট পাকিস্তানের সাথে থাকবে না ভারতের সাথে ? ৫৫,৫৪১ ভোট বেশী পাকিস্তানের পক্ষে পরে। যার ফলে সিলেট পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায়। আসামের করিমগঞ্জের কিছু থানা ভারত থেকে আসত দেয় নাই তৎকালীন দায়িত্বে থাকা র্যাডক্লিফ।
ঐ সময় আমার দাদা হাজী সাহেদ আলী ভোট দেন ভারতের পক্ষে। এর কারন ছিল দাদা ছিলেন কংগ্রেস সমর্থক ও দেওবন্দ পন্থী ।
দেশ ভাগের ফলে আমদের অনেক জমি ও কয়েকটা কমলার বাগানও চলে যায় ভারতে অংশে।
ভারতের মুল শাহ আরপিন মোকামের সাথে মোকাম পাড়া নামে একটা মুসলিম বসতি ছিল যা বর্তমানে নাই। সেই সময় আশে পাশে সব গ্রামই ছিল গারো ও খাসিয়াদের । পাকিস্তান বর্ডারে আর্মস পুলিশ আর ভারতে সম্ভবত হোমগার্ড ছিল।আবার সমস্যা ছিল মেঘালয় কি স্বতন্ত্র রাষ্ট হবে কি না? তখনকার দিনে এই নিয়ে মেঘালয়ে ছিল চরম উত্তেজনা।
(নংস্তৈন রাজা উইক্লিব সিমের কাহিনী)
বর্তমান ঠিকানা তাহিরপুর উপজেলার সিমান্ত অঞ্চল রাজাই।
দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর, ২৫টি খাসি রাজ্যের মধ্যে ১৯টি রাজ্য একীভূতকরণের দলিলে (Instrument of Accession) স্বাক্ষর করে ভারতীয় রাজ্যের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে,৬টি খাসি রাজ্য এ দলিলে স্বাক্ষর করেনি এবং তার মধ্যে নংস্তৈন ১৯৪৮ সালের ১৩ জানুয়ারি স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
নবগঠিত এ রাজ্যে উইক্লিব সিমের মামা রাজা সিব সিং সিম রাষ্ট্রপ্রধান এবং উইক্লিব সিম রাজ্য সচিব হিসেবে নির্বাচিত হন।
পরে ১৮ মার্চ ভারত সরকারের আর্মিরা রাজা সিব সিং সিমকে আটক করে এবং তার পরদিন রাজাকে বাধ্য করেন একীভূতকরণের দলিলে স্বাক্ষর করতে।
অন্য পাঁচটি রাষ্ট্র চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
উইক্লিব সিম তখন রাজ্যর রাজধানী থেকে দূরে সীমান্তবর্তী মহেষখোলা (বর্তমান সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় অবস্থিত) এলাকায় অবস্থান করছিলেন এবং এ সুযোগে তৎকালীন আসাম রাজ্য সরকার উইক্লিবের নংস্তৈনে তার প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেয়। তিনি পাকিস্তানের রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। তিনি এমএসসি ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন,তিনি পাকিস্তান/বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পোস্টে এবং শেষে টাকেরঘাট প্রকল্পটির প্রধান হিসাবে অবসর নেন। রাজারই গ্রামেই শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন ।
তখনকার দিনে বিএসএফ ও ইপিআর হয় নাই ।
ভারতের পুলিশ ঐ মোকাম পাড়া গ্রামের মানুষকে অত্যাচার করে গ্রাম ত্যাগ করার জন্য । প্রায়ই এসে মারধর করে,এমন কি প্রতিদিন টাকা দিয়েও বাঁচতে পারত না ।সবাই সিদ্ধান্ত নেয় একটা বিহিত করতে হবে। পরের যখন গ্রামে আসে (একটা পুলিশ বেশী অত্যাচার করত) ঐদিন সে ই আসে, থাকে ধরে এমন মাইর দেয় যে পুলিশটা মারা যায়। সিদ্ধান্ত নেয় সবাই গ্রাম থেকে চলে আসবে। এক কাপড়ে মহিলা, বাচ্চা ও গরু মহিষ নিয়ে সবাই গ্রাম ফেলে লাউড়ের গড় চলে আসে । এখানেই গ্রামের ইতিহাস শেষ। কিন্তু না কিছুটা রেশ ছিল , আমার বন্ধু আজিমের একজন চাচা ছিলেন তিনি বাংলাদেশে আসেন নাই। তিনি ছিলেন আমার বাবার আপন মামাত ভাই।
জাবেদ আলী ও হাজী জাফর আলী দুই ভাই, জাবেদ আলী ছোট। বৃটিশ আমলেই হাজী জাফর আলী কমিউনিস্ট পাটির সাথে জড়িত ছিলেন। উনি ছিলেন আমার এলাকার কিংবদন্তি পুরুষ ,ঐ ঘটনার পর তিনি তার সমস্ত পরিবার লাউড়ের গড় পাঠিয়ে দেন। তিনি ঘোষনা দেন পাকিস্তানে বাস করবেন না ভারতেই থাকবেন।
ছবি সুলেমান খান ও আন্দ্রিয়দা ।
ক্রমশ————–
কমেন্ট করুন